আবেগ ও বাস্তবতা
আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। একাট হল সাভাবিক কাজ যা আমরা সচরাচর ও সাভাবিক ভাবেই করে থাকি আর একটি হল অস্বাভিক কাজ যা আমরা সাধারনত কোন চিন্তা ভাবনা না করে হঠাৎ করেই করে ফেলি। আর এই হঠাৎ কাজটা আমরা আমাদের মনের চাহিদা পূরনের জন্য করে থাকি। আমরা সবসময় আমাদের মনের কথা শুনিনা। কিন্তু কিছু কিছু কাজ আছে যা আমরা আমাদের মনের বিরুদ্ধে করতে চাইলেও করতে পারিনা। মনের বিরুদ্ধেই আমরা অনেক সময় আমাদের অতীত জীবনে ফিরে যাই। সেখানে কি হয়েছিল, কেন হয়েছিল তা নিয়ে ভাবতে থাকি। সেই অতীত নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমরা অনেক সময় আমাদের বর্তমানের গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় নষ্ট করে ফেলি। যা পূরণ করতে গিয়ে অন্যান্য কাজও পিছিয়ে পরতে থাকে। এই পেছনে ফিরে তাকানোটা হল “আবেগ” আর সেই আবেগকে দূরে সরিয়ে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে “বাস্তবতা”।
বাস্তবতার কাজ হল মানুষকে তাদের অতীত থেকে দূরে রাখা। তবে একেবারেই অতীত থেকে বিচ্ছিন্ন করা তার মূল উদ্দেশ্য নয়। বাস্তবতার অন্যতম কাজ হল অতীত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা বর্তমানে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতকে তৈরি করা। যেহেতু বাস্তবতা অতীতকে পূরোপূরি ভাবে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনা, তাই মানুষ মাঝে মাঝেই তাদের অতীতে ফিরে যায় এবং যাবে, আর এটাই হল বাস্তবতা।
আবেগ মানুষকে অতীতে নিয়ে যায় আর বাস্তবতা মানুষকে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়। মানুষ যখন অতিরিক্ত আবেগাপ্লুত হয়ে পরে তখন সে তার ভবিষ্যতকে নষ্ট করে ফেলে। ভবিষ্যৎ তখন তার কাছে একটি মূল্যহীন বস্তুতে পরিনত হয়ে যায়। মানুষ তখন তাকে যত যাই বুঝাক না কেন সে কিছুই বুঝতে চায়না শুধু তার অতীতকে ছাড়া। একটা সময় হয়তো সে তার বাস্তবতার তাগিদে বর্তমানে ফিরে আসে কিন্তু তখন অনেক দেড়ি হয়ে যায়।
বাস্তবতা মানুষকে এমন ভাবে ভবিষ্যতের দিকে টানতে থাকে কেউ যদি একবার এর মূল্য বুঝে যায় তবে তাকে আর কেউ পিছনের দিকে নিয়ে যেতে পারে না। একটা সময় এমন হয়ে যায় যে, সে তার অতীতকে সম্পূর্ণ ভাবে ভুলে যায়। তার ভবিষ্যৎ তৈরি করতে গিয়ে যে অতীতে কিছু মানুষের অবদান ছিল সে তাও মনে রাখেনা। সে তখন মনে করে “তার সাফল্যের পেছনে শুধু তার অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া আর কিছুই নেই। সে এতদিন কষ্ট করেছে বলেই আজ সে সফলতার মুখ দেখতে পেরেছে। সে যদি এত কষ্ট না করত পরিশ্রম না করত তবে আজকের এই সফলতার মুখ সে দেখতে পেতনা”।
বাস্তবতা মানুষের সাথে খুব নিষ্ঠুর ভাবে খেলা করতে থাকে। তার নিষ্ঠুরতার পরিমান এত বেশি যে, সে সাধারণ একজন মানুষকে অসাধারন মানুষে রূপান্তরিত করে ফেলে যা সবাই সাভাবিক ভাবে গ্রহন করতে পারে না। আর এর ফলে তৈরি হয় মানুষের মনের মাঝে অশান্তি, সৃষ্টি হয় ঝগড়ার, নষ্ট হয় বিবেক, হারিয়ে যায় মানবতা।
No comments:
Post a Comment