বিবেক আর আবেগ এর মাঝে যে পার্থক্য তা আমরা আসলেই কি বুঝি?
সহজ ভাবে বলতে গেলে, কোন বিষয়ে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত যদি মাথা থেকে আসে অর্থাৎ ভালভাবে চিন্তা ভাবনা করে পাওয়া যায় তবে তা হল বিবেক আর ঐ একই সিদ্ধান্ত যদি মন থেকে আসে তবে তা হয় আবেগ। বিবেকের কাজে যুক্তি থাকে আর আবেগের কাজে যুক্তি থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। আবেগ দেখাতে গিয়ে কখনো বিবেক কে বিসর্জন দেয়া উচিৎ নয়। সব ধরনের কাজে আবেগ থাকবেই তবে বিবেককে বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিৎ। আর তাই বিবেক অবশ্যই আমাদের প্রত্যেকের থাকা উচিৎ।
বিবেক হলো ঐ জিনিস যা ন্যায় অন্যায় কে বুঝতে বেশি গুরুত্ব দেয়, আর আবেগ কেবল প্রেম প্রীতি ভালবাসা দুঃখ বেদনাকে গুরুত্ব দেয় । মানুষ মাত্রই আবেগ প্রবন। আর তাই অত্যাধিক আবেগ প্রবনতার কারনে মানুষ প্রায়শঃই মারাত্তক ভূল করে বসে। অনেক সময় এ ধরনের ভূলই মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কাজেই আবেগকে নিয়ন্ত্রন রেখে কাজ করে যেতে হবে। আবেগের সর্বনাশা উত্থান-পতনের পাঁকে নিজেকে পতিত করা বোকামির লক্ষণ। আর তাই যেকোন ধরনের সিদ্ধান্ত আবেগ দিয়ে নয় বরং আমাদের বিবেক দিয়ে নেয়া উচিৎ।
মানুষের জেমন একটি কপালে দুটি চোখ থাকে তেমনি মনের মাঝেও দুটি চোখ থাকে যার একটি হল বিবেক আর অপরটি হল আবেগ। মনের দুটি অংশ অর্থাৎ আবেগ ও বিবেক দ্বারা আমাদের জীবন পরিচালিত হয় । আমরা মানুষ স্থান কাল পাত্র ভেদে আবেগ ও বিবেক কে কাজে লাগাই। আবেগ দিয়ে কি হবে, যদি বিবেক না থাকে? বিবেক শুধুই মনের উপর চাপ বাড়ায়।
এই যুগে কিছু পরাজিত মানুষ এখনও বিবেক মেনে কাজ করে। তারা কোনকিছুতে ব্যর্থ হলে এই ভেবে মনে আনন্দ পায় যে বিবেকের কাছে কোনো জবাবদিহিতা করতে হবে না । আর সেইসব পরাজিত মানুষের জন্য শুধুই আফসোস করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকেনা। বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে পৃথিবীতে কেউ কখনো সফল হতে পারেনি।
আর তাই হয়তো হেলাল হাফিজ বলে ছিলেন, “যুক্তি যখন আবেগের কাছে অকাতরে পর্যুদস্ত হতে থাকে, কবি কিংবা যে কোনো আধুনিক মানুষের কাছে সেইটা বোধ করি সবচেয়ে বেশি সংকোচ আর সঙ্কটের সময়”।
আমরা অনেকেই বিবেক বিবেক বলে গলা ফাটাই কিন্ত এটা কখনো ভাবিনা যে বিবেকটাও এক ধরনের আবেগ। শুধু আবেগ দিয়ে যেমন দুনিয়া চলেনা তেমনি শুধু বিবেক দিয়েও দুনিয়া চালানো যায়না । সময়োপযোগী ও বস্তুনিষ্ঠ আচরণ এর জন্য বিবেক যেমন অপরিহার্য ঠিক তেমনি কোন সম্পর্ক, ভালবাসা বা মনুষ্যত্বকে বুঝার জন্য আবেগটাও অপরিহার্য। বিবেক দিয়ে আমরা আবেগ কে লাগাম দেই আবার আবেগ দিয়ে বিবেক কে বন্ধ করে রাখি। আমরা বিবেক দিয়ে যেমন আবেগকে উপলব্ধি করি ঠিক তেমনি আবেগ দিয়েও বিবেককে উপলব্ধি করা উচিৎ । আর এভাবেই এরা একে অপরের পরিপুরক হয়ে থাকে।
মানুষ যখন বড় ভাবে আঘাত পায় বা ব্যর্থ হয় তখন সে হয় অতি বিবেকবান আর না হয় সে অতি আবেগি । মানুষ আবেগ আর বিবেক দিয়েই তার মনের খোরাক মেটায়। বিবেক মানুষকে প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা করে আর আবেগ প্রতারিত হতে বা প্রতারিত করতে উৎসাহ যোগায়। বিবেক সবাইকে মানুষ হতে সাহায্য করে আর আবেগ অনেক সময় মানুষকে করে ফেলে অমানুষ। আবেগ শুধু যে খারাপই জন্ম দেয় এমন কথা কিন্তু বলছি না। পৃথিবীতে আজ যা কিছু সুন্দর আর মহান তার সব কিছুর সৃষ্টি কিছুটা বিবেক মিশ্রিত আবেগ থেকেই হয়েছে। আবেগ না থাকলে পৃথিবীতে ভালবাসার জন্মই হত না, হতনা কোনো সুন্দরের সৃষ্টিই হতনা।
যেহেতু আমরা মানুষ, সেহেতু আমরা সবকিছুই বুঝি কিন্তু বড় ব্যপার হল আমরা তা অনুধাবন করার চেষ্টা করি না আর এটাই হলো আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিবেক সবসময় ভালোর পথ দেখায় কিন্তু আবেগ কখনই ভালোমন্দ বিচার করার সময় পায় না। আর তাই যখন যে পরিস্থিতি উপস্থিত হয় তখন সেভাবেই আবেগ তাড়িত হয়। হোক সেটা ভালোর দিকে বা হোক সেটা মন্দের দিকে।
আবেগ আর বিবেকের পার্থক্যটা সবক্ষেত্রে হয়তো বুঝা যায়না, তবে যারা নিজেদের সচেতন বলে দাবী করে বা ভাবে, তারা মনে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আবেগ এবং বিবেক কে আলাদা করেই সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা সাধারণ মানুষদেরও উচিৎ আবেগ আর বিবেকের পার্থক্যটা উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী আমাদের জীবন পরিচালিত করা।
5 comments:
একদম ফালতু নয়, তবে চলবে। মনের দুটি চোখ থাকে??? আর হাসাবেন না প্লিস।
মনেরচোখ😂
Nice
সব কিছুই তো ভিজলাম কিন্তু ২টা যে চোখ থাকে বিতরের আগে জানতাম না
উদাহরণ দিয়ে বুঝালে আরও ভালো লাগত।
Post a Comment